আজ || রবিবার, ১৭ অগাস্ট ২০২৫
শিরোনাম :
  গোপালপুরে এসএসসি পরীক্ষায় কৃতি শিক্ষার্থীদের সংবর্ধনা       ধনবাড়ি মডেল প্রেসক্লাবে সাংবাদিক তুহিন হত্যার প্রতিবাদ ও দোয়া       গোপালপুরে মরহুম আরাফাত রহমান কোকো স্মৃতি ফুটবল টুর্নামেন্ট       টাঙ্গাইল-২ আসনে গণঅধিকার পরিষদের প্রার্থী শাকিল উজ্জামান       গোপালপুরে দুর্যোগে ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারের মাঝে ত্রাণসামগ্রী বিতরণ       গোপালপুরে শিক্ষার্থীদের মাঝে গাছের চারা বিতরণ করেন সালাম পিন্টু       গোপালপুরে বিএনপির বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্রের প্রতিবাদে ছাত্রদলের বিক্ষোভ       গোপালপুরে যথাযোগ্য মর্যাদায় জুলাই শহীদ দিবস পালিত       গোপালপুরে বিএনপির বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্রের প্রতিবাদে বিক্ষোভ মিছিল       গোপালপুরে প্রতিপক্ষের হামলায় ১২ মামলার আসামি চাকমা জাহাঙ্গীর নিহত    
 


মানুষ মানুষের জন্য; সেই নগেন বাগদীর পাশে দাড়ালেন এক মহৎপ্রান ব্যক্তি

জয়নাল আবেদীন :

Photo-Gopalpur 11.02.2016 (3)

কবি সুকান্ত রচিত রানার কবিতায় ডাকহরকরার বেদনার্ত জীবনের চিত্র আঁকা হয়েছে। শেষ প্যারা ‘রানার! রানার ! ভোরতো হয়েছে- আকাশ হয়েছে লাল/ আলোর স্পর্শে কবে কেটে যাবে এই দুঃখের কাল।’ কবি সুকান্তের এ আশাবাদ আজ পূর্ণ হয়েছে। এক রানার আলোর স্পর্শ পেয়েছেন। তাই ডাকহরকরা নগেন বাগদীর দুঃখের কাল ঘুচে গেছে। ষাট বছর পর নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক সজ্জন ব্যক্তি ডাকবিভাগের রানার নগেনের পাশে দাড়িয়েছেন। বাড়িয়ে দিয়েছেন অকৃপন সহযোগিতার হাত। নগেন পেয়েছেন এক লক্ষ টাকা আর পর্যাপ্ত গরম কাপড়। এ মহানুভবতায় দুঃস্থ নগেনের চোখেমুখে এখন হাসি আর তৃপ্তির ঝিলিক। এ কথা আবারো প্রমান হলো মানুষ মানুষের জন্য। সবার উপর মানুষ সত্য। গত বৃহস্পতিবার ১১ ফেব্রুয়ারী দুপুরে গোপালপুর উপজেলা নির্বাহী অফিসার মাসুমুর রহমান নিজ কার্যালয়ে এক লক্ষ টাকার চেক ও গরম কাপড় নগেনের নিকট হস্তান্তর করেন। এ সময়ে উপস্থিত ছিলেন গোপালপুর উপজেলা আওয়ামীলীগের সভাপতি এবং মির্জাপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান হালিমুজ্জামান তালুকদার, প্রেসক্লাব সভাপতি অধ্যাপক জয়নাল আবেদীন, সম্পাদক সন্তোষ কুমার দত্ত, হিন্দু বৌদ্ধ-খৃস্টান ঐক্য পরিষদের সভাপতি পিযুশ কান্তি সাহা, ন্যাশনাল ব্যাংক গোপালপুর শাখার ব্যবস্থাপক গৌতম ঘটক, উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মোহাম্মদ শফিকুর রহমান, গোপালপুর বার্তা ২৪ ডট কম এর বার্তা প্রধান কে.এম মিঠু, দৈনিক মজলুমের কন্ঠের প্রতিনিধি সেলিম হোসেন, সংবাদপত্র ব্যবসায়ী আব্দুস সালাম খানসহ উপজেলায় কর্মরত সাংবাদিক ও সরকারি কর্মকর্তারা। গত ২১ জানুয়ারী দৈনিক ইত্তেফাকে,‘কষ্টে চলে নগেন হরকরার জীবন’ এবং গোপালপুর বার্তা ২৪ ডট কম নিউজ পোট্রালে ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠি বাগদী শীর্ষক সিরিজ প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়। নগেন বাগদীকে নিয়ে লেখা এ মানবিক প্রতিবেদন পড়ে মর্মাহত হন নামপ্রকাশে অনিচ্ছুক রাজধানী ঢাকার এক ভদ্র মহিলা। বিশ্বস্ত সুত্রে জানা যায়, ওই ভদ্রমহিলার মামা যাদব চন্দ্র সাহা ছিলেন পদস্ত ব্যাংক কর্মকর্তা। নিঃসন্তান অবস্থায় সম্প্রতি স্বর্গীয় হন তিনি। কিছুদিন আগে স্বর্ণপ্রসবিনী মাতা প্রিয়বালা সাহা ও ইহকাল ত্যাগ করেন। স্বর্গীয় ওই দুই স্বজন জীবিতকালে দুঃস্থদের প্রচুর দানখয়রাত করতেন। দুঃস্থ ও অসহায় মানুষের পাশে দাড়িয়ে আনন্দ পেতেন। বাল্যকাল থেকে এসব দেখে তিনি বড় হয়েছেন। এখন কর্মজীবনে এসে অসহায় মানুষের জন্য তার প্রাণ কাঁদে। উদার পারিবারিক শিক্ষাকে তিনি বাস্তব ক্ষেত্রে কাজে লাগাতে সাধ্যমত চেষ্টা করছেন। যার ফলশ্রুতি এ বিশাল অনুদান। তথ্যনুসন্ধানে জানা যায়, জানুয়ারী তার প্রিয়জন হারানোর মাস। এ মাস এলে তিনি প্রিয়জন হারানোর বেদনায় কাতর থাকন। এজন্য জানুয়ারী মাসে নগেন বাগদীকে নিয়ে লেখা দৈনিক ইত্তেফাকের মানবিক রিপোর্ট পড়ে তিনি আল্পুত হন। স্বর্গীয় দুই স্বজনের আত্মার মাঘফেরাত কামনায় দুঃস্থ মানুষের পাশে দাড়ানোর প্রতিজ্ঞা থেকে ইত্তেফাকের সার্কুলেশন ম্যানেজার দীপক চন্দ্র রায় এবং বীমা কর্মকর্তা আহমেদ ফারুখের সাথে যোগযোগ করেন। নগেনকে আর্থিক সহায়তা দেয়ার অভিপ্রায় ব্যক্ত করেন তিনি। বিষয়টি সমন্বয়ের দায়িত্ব দেয়া হয় দৈনিক ইত্তেফাকের গোপালপুর সংবাদদাতা, গোপালপুর প্রেসক্লাবের সভাপতি এবং গোপালপুর বার্তা ২৪ ডট কম এর সম্পাদক অধ্যাপক জয়নাল আবেদীনকে। গত সোমবার ন্যাশনাল ব্যাংক গোপালপুর শাখায় নগেনের হিসাব নাম্বারে এক লক্ষ টাকা প্রেরন করা হয়। শীত বস্ত্র পাঠানো হয় জাতীয় পত্রিকাবাহি গাড়িতে। চেক হস্তান্তর অনুষ্ঠানে উপজেলা নির্বাহী অফিসার মাসুমুর রহমান বলেন, দেশে এখনো সজ্জন মানুষ রয়েছে। যারা লক্ষ টাকা দান করে নিজের নাম গোপন রাখতে পছন্দ করেন। প্রার্থনা করি বাংলার ঘরে ঘরে যেন এমন মানুষ জন্ম নেয়। তিনি আরো জানান, জাপানে ডাক বিভাগকে বেসরকারিকরণ করা হয়েছে। নাম দেয়া হয়েছে জিপি। সেখানে ডাক বিভাগ উন্নত মানের সেবা দিয়ে থাকে। ডাক কর্মচারিরা ভালো বেতনভাতা পান। তাদের সামাজিক সম্মান ঈর্ষণীয়। আর বাংলাদেশে কোনো মেধাবি লোক ডাক বিভাগে চাকরি করতে চায়না। নগেন বাগদীর মতো মানুষ ৬০ বছর ধরে ডাক বিভাগে টানা চাকরি করে এখন সাকূল্যে বেতন পান এগারোশ টাকা। খাটতে হয় সারা দিন। অথচ কোনো পেনশন নেই। পদোন্নতি নেই। অবসরে যাওয়ার বয়ঃসীমা নেই। তা হলে এ কেমন তরো চাকরি? ন্যাশনাল ব্যাংক, গোপালপুর শাখার ম্যানেজার গৌতম ঘটক বলেন, সমাজে এখনো ভালো মানুষ রয়েছেন। যাদের জন্য সমাজ থেকে এখনো মানবিকতা হারিয়ে যায়নি। তিনি এ ধরনের দানশীলতা এবং অনুসন্ধানী সাংবাদিকতার প্রশংসা করেন। এদিকে একসঙ্গে এত টাকা পাওয়ার আনন্দে নিরবে চোখের জল ফেলেন নগেন। স্থানীয় সাংবাদিকের প্রতিক্রিয়া জানিয়ে বলেন, ‘এ পাওয়া আমার জন্য স্বপ্ন। জীবনে কোনোদিন পাঁচ টাকা জমাতে পারিনি। এখন এত টাকা পেয়ে আামি অভিভূত। এ টাকা ডাক বিভাগের সঞ্চয় স্কীমে জমা রাখার সিদ্ধান্ত নিয়েছি।’ উল্লেখ্য, নগেন বাগদীর বাড়ি গোপালপুর উপজেলার ঝাওয়াইল গ্রামে। ভিটেবাড়ি চালচুলোহীন অশীতিপর নগেন পেটের তাগিদে ছয় দশক ধরে ডাক বিভাগের রানার হিসাবে কাজ করেন। রোদবৃষ্টি উপেক্ষা করে সাতআট মাইল পায়ে হেটে ব্যাগ কাঁধে শাখা থেকে আরেক শাখায় ছুটে চলেন নিরন্তর।

নগেনের বিশ্বাস-অবিশ্বাস
গনেশ বাগদীর এ অনুদানের খবর নিয়ে গত ৩০ জানুয়ারী সন্ধ্যায় সহকর্মী কে এম মিঠুকে নিয়ে ঝাওয়াইল বাজারে যান এ প্রতিবেদক। অবসরপ্রাপ্ত স্কুল শিক্ষক পিযুশ কান্তি সাহার দোকানে বসে রাত ৮টায় গনেশের বাড়িতে লোক পাঠিয়ে জানা গেল তখনো ফেরেনি। সকাল দশটায় ডাক নিয়ে গেছেন বাগুয়া শাখা পোস্ট অফিসে। দীর্ঘক্ষন বসে থাকার পর গনেশের নাগাল মিললো। এরপর যা বললেন তার সারমর্ম হলো, সকাল ১১টায় তাকে অফিসে বসিয়ে রেখে পোস্ট মাস্টার সাহেব সারাদিন ক্ষেতে বোরো চারা রোপন করেছেন। সন্ধ্যার পর তিনি ক্ষেত থেকে উঠে এসে ডাক ব্যাগ রেড়ি করেন। সেদিন ছিল প্রচন্ড কুয়াশা আর শীত। এক প্রস্ত ছেড়া কাপড় ছড়ানো অশীতিপর নগেন রাত সাড়ে আটটায় মেইল ব্যাগ নিয়ে ঝাওয়াইল সাবপোস্ট অফিসে এনে জমা দেন। তার ভাষ্য এটি প্রতি দিনের চিত্র। পলিথিনে ছাওয়া বাড়িতে নিবাস না করে ঝাওয়াইল সাবপোস্ট অফিসের বারান্দায় ৩৬৫ রাত কাটান নগেন। দৈনিক ইত্তেফাকে লেখালেখির দরুন এক সহৃদয় ব্যক্তি এক লক্ষ টাকা অনুদান দিয়েছেন এবং এ টাকা দিয়ে কি করবেন জানতে নগেনের চোখেমুখে অবিশ্বাস আর বিরক্তির ছাপ ভেসে উঠে। বিড় বিড় করে কয়েকটি তাচ্ছিল্য বাক্য উচ্চারণ করে সবার সামনে থেকে প্রস্তান করেন নগেন। পাশে বসা অবসরপ্রাপ্ত স্কুল শিক্ষক পিযুশ কান্তি সাহা বললেন‘ নগেনের মতো মানুষরা প্রত্যেক দিন, প্রত্যেক ক্ষণে প্রতারিত হয়। প্রতারিত হতে হতে এখন দ্রুব সত্যকেও বিশ্বাসে আনতে পারছেননা প্রান্তিক জনগোষ্ঠির নগেন।

মন্তব্য করুন -


Top
error: Content is protected !!